মাছে ভাতে বাঙালি। ভরা বর্ষায় ভোজনরসিক বাঙালির ইলিশ প্রীতিকে কেন্দ্র করে বানানো একটি ভোজ্য তেলের বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে চন্দ্রিল ভট্টাচার্যকে। ঘটনাচক্রে ওই তেলের সংস্থাটি আদানি গোষ্ঠীর। ব্যস, আর যায় কোথায়! বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে নানা ‘মিম’ তৈরি হতে শুরু করে। আর তা উল্কার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতে। ফেসবুক পেরিয়ে ইনস্টা কিংবা টুইটার পাড়াতেও পৌঁছে গিয়েছিল ওই পোস্ট। এমনকী সংস্থার সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা ভিডিয়োর কমেন্ট বক্সও ভরে উঠেছিল নেতিবাচক মন্তব্যে। কেউ লেখেন, ‘চন্দ্রিল মশাইও দেখছি বিক্রি হয়ে গেলেন। সবার উপর মালপানি সত্য, তাহার উপর নাই’। কেউ আবার বলেন, ‘চন্দ্রিল না বাঙালির ক্যাওড়া বিবেক? তা বিবেক বাবু, কোথায় আপনি’? বিষয়টি নিয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’ আরকি।
এবারে আসা যাক ‘মিম’ প্রসঙ্গে। সোমবার চন্দ্রিল কেন্দ্রিক যে ‘মিম’-টি সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে তাতে লেখা রয়েছে, ‘ডিবেট হলে বলিস, পুঁজিবাদ নিয়ে দু’-চার লাইন ঝেড়ে দেব। আপাতত আদানি অ্যাডটা করে নিই’। ঠিক কোন জায়গা থেকে শিল্পীকে কটাক্ষ করা হয়েছে, সে বিষয়টি খুব পরিষ্কার। আসলে বিগত কিছু বছর ধরে নানা পেপ টক শোতে দেখা গিয়েছে চন্দ্রিল ভট্টাচার্যকে। তাঁর লেখনী যতটা শাণিত, বক্তা হিসেবেও ততটাই শার্প তিনি। ফলে সমাজের নানা খুঁত বড্ড স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে পারেন সুবক্তা। চাঁচাছোলা ভাষায় তুলোধোনা করতে পারেন যেমন, মৃদু কণ্ঠে সারকাজমও করেন মাঝে মধ্যে। এদিন
Meme প্রসঙ্গে এই সময় ডিজিটাল-এর তরফ থেকে চন্দ্রিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি সত্যিই দেখিনি কী মিম ভাইরাল হয়েছে। তবে যা চলছে চলুক। আমার কিছু যায় আসে না। গণতান্ত্রিক দেশ। যে যা ইচ্ছে বলতে পারে। সেটা তার ব্যাপার। ফলে এ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই’।
২০১৯ সালে ‘বাঙালির সংস্কৃতি মনস্কতা কি কমে যাচ্ছে’ শীর্ষক TEDx Talk -এ দুরন্ত বক্তব্য রেখে রাতারাতি ‘সেনসেশনাল’ হয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে যে কোনও ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে তাঁর ওপিনিয়ন শুনতে নয়া প্রজন্ম পৌঁছে যায় তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। কবির কায়দায় বলতে গেলে, ‘হিজ ওপিনিয়ন ম্যাটার্স বস’! নানা ডিবেটে অংশ নিয়ে থাকেন লেখক। নানা বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দেন। পুঁজিবাদ প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন অতীতে। আর ট্রোলরা খোঁচা দিয়েছেন এই জায়গা থেকেই। বছরের শুরু থেকেই আদানি বিতর্ক প্রকট। আর সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে আবারও।
উল্লেখ্য, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও ওই সংস্থার বিজ্ঞাপনের জন্য ট্রোলের সম্মুখীন হতে হয়েছিল সাম্প্রতিক অতীতে। ‘হেলদি অয়েল’ খেয়েও কেন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল মহারাজের দিকে। তবে সৌরভও ‘কিছু যায় আসে না’ গোছের মনোভাব দেখিয়েছিলেন সে সময়। যেমনটা এবারে করলেন চন্দ্রবিন্দুর লিরিসিস্ট। অবশ্য তিনি নিজের পেপ টকে সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘…সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতরামোর উৎসব চলছে। সকলে মিলে একটি মানুষকে টার্গেট করে ভাবছে, এঁকে অপমান করলে ফ্যাশনেবল হওয়া যাবে। কদর্য ভাষায় আক্রমণ করার জন্য বাঙালিরা কতটা দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে, এই সমস্ত কিছু একটি জাতির সংস্কৃতিমনস্কতাকে তুলে ধরে’।