“লজ্জাই নারীর ভূষণ”, খুব ছোটবেলা থেকেই সমাজের এই প্রচলিত প্রবাদটি শুনে শুনে বড় হয়েছি আমরা সকলেই। নারী শরীরের চারপাশ সর্বদা আবৃত থাকবে লজ্জাভরণে। খোলা-মেলা পোশাকে নারীর “শালীনতা” খর্ব হয়, এমনটা মনে করে থাকেন অনেকেই। তবে বর্তমান প্রজন্ম অবশ্য এসবের ধার ধারে না। “হট এন্ড সেক্সি”, যুগের এই ট্রেন্ডের হাওয়া লেগেছে নারী শরীরে। তাই আর শরীর ঢাকা পোশাক নয়, নারী এখন খোলা-মেলা পোশাকেই স্বচ্ছন্দ্য।
উনবিংশ শতাব্দীর সেই আটপৌরে করে শাড়ি পড়া, মাথায় আধ হাত ঘোমটা টানা নারীরা আজ এই সমাজে বড়ই অচল। ক্যামেরার সামনে উন্মুক্ত শরীর তুলে না ধরলে নেটিজেনদের আকর্ষণ পাওয়া যাবে কি করে? সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ, সকলেই আজ “সুন্দরী” হওয়ার লক্ষ্যে নয় বরং “হট এন্ড সেক্সি” ট্রেন্ডে গা ভাসানোর লড়াইয়ে মেতে উঠেছেন। তবে একটা সময় ছিল যখন “হট এন্ড সেক্সি”র মানেই বুঝতেন না আম আদমি।
সত্তরের দশকে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে যে সুন্দরীরা রাজত্ব করতেন, দর্শকের আকর্ষণ পেতে তাদের কখনোই নিজেদের উন্মুক্ত শরীর ক্যামেরার সামনে তুলে ধরতে হতো না। “শালীনতা”র মানে বুঝতেন দর্শক এবং সেলিব্রেটিরা। বাংলার “মহানায়িকা” সুচিত্রা সেনের কথাই ধরা যাক। বাংলার এই এভারগ্রীন নায়িকাকে কোনদিনই ফুল-হাতা ব্লাউজ এবং নাভি ঢাকা শাড়ি ছাড়া পর্দার সামনে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
তবে যুগ বদলিয়েছে। যুগের সঙ্গে সঙ্গে বদলিয়েছে সমাজের চাহিদা, মনোভাব এবং শালীনতা বোধ। সেই বোধ থেকেই হয়তো আধুনিক প্রজন্মের এই যুগে ক্লিভেজ, উন্মুক্ত পিঠ কিংবা উন্মুক্ত নাভি ছাড়া নেটিজেনদের আকর্ষণ করা যায় না। যিনি যত বেশি উন্মুক্তভাবে সোশ্যাল সাইটে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন, সমাজ তাকে তত বেশি “কুল”, “ট্রেন্ডি”, “আধুনিকমনস্ক”, “মোহময়ী” বলে জানবে।
হালফিলে এরকমই “মোহময়ী” অবতারে নেটিজেনদের সামনে ধরা দিয়েছিলেন রাইমা সেন। সম্পর্কে তিনি বাংলার সেই এভারগ্রীন নায়িকা সুচিত্রা সেনেরই নাতনি। তবে দিদিমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মতাদর্শের কিন্তু বহু পার্থক্য রয়েছে। বিশেষত পোশাক-আশাক নিয়ে মুক্তমনা টলিউড অভিনেত্রী রাইমা সেন। নেটিজেনদের সামনে উন্মুক্ত পোশাকে নিজেকে মেলে ধরতে তার কোনও দ্বিধা নেই, “লজ্জা বোধ” নেই, অভিনেত্রী নিজেই স্বীকার করলেন সেই কথা।
সম্প্রতি টলিউডের বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক তথাগত ঘোষের ক্যামেরায় খোলামেলা পোশাকে ধরা দিয়েছিলেন রাইমা সেন। সম্পূর্ণ নিরাভরণ উর্ধাঙ্গ, আলগা কাপড়ে দুই হাত দিয়ে ঢাকা শরীরের সামনের অংশ, নিন্মাঙ্গে নীল রঙের একটি জিন্স, খোলা চুল, কাজল কালো চোখে ক্যামেরার দিকে একপাশ হয়ে ছবিটি তুলেছেন রাইমা। ছবিতে তার খোলা পিঠ দর্শকের নজর এড়িয়ে যায়নি। বরং নেটিজেনের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুই ছিল তার উন্মুক্ত শরীর।
এই ছবিটি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। নেটিজেনের একাংশ রাইমার এই “মোহময়ী” অবতারে রীতিমতো কুপোকাত। সোশ্যাল সাইটের উষ্ণতা বৃদ্ধি করেছে রাইমার এই পোজ, তা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন সকলেই। আবার একদল নেটাগরিক তার সমালোচনায় ব্যস্ত। “শরীর দেখাতে চাইলে, সমস্তটাই দেখান”! “এরা আর ভাল থাকতে দিল না”! ইত্যাদি নানা তীব্র বাঁকা মন্তব্যে ভরে উঠছে তার কমেন্ট বক্স।
বারবার এমন সমালোচনা এবং বিরূপ মন্তব্য শুনতে শুনতে অবশেষে সমালোচনাকারীদের জবাব দিলেন রাইমা। “মানুষের শালীনতা বোধে আঘাত দেওয়া ছবি তুলতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। কারণ আমি লজ্জা পাই না”!, একটি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আধুনিকমনস্কা অভিনেত্রী। ১৫ই মে সোশ্যাল সাইটে তার যে ছবিটিকে ঘিরে নেট দুনিয়ায় এত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নেটিজেনদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন সুচিত্রা সেনের পৌত্রী।
তাছাড়া রাইমা মনে করেন যে ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক দেখা দিয়েছে, আদতে তা অতটাও “সাহসী” নয়। তিনি এর আগেও এর থেকে বহুগুণে “সাহসী” পোজে ক্যামেরার সামনে ধরা দিয়েছেন। অতএব নেটিজেনদের বক্রোক্তি গায়ে মাখেন না রাইমা। তার কাছে খোলামেলা পোশাকে ক্যামেরার সামনে আসাটা কোনও ব্যাপারই নয়। তিনি আগেও এমন বহুবার করেছেন। ভবিষ্যতেও হয়তো তাকে এমন অবতারের আবারও দেখতে পাবো আমরা।
অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়োতে ‘দ্য লাস্ট আওয়ার’ সিরিজে আপাতত চুটিয়ে কাজ করছেন অভিনেত্রী রাইমা সেন। অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ছবি ‘মাই’-তেও অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। রাইমা আপাতত নিজের কেরিয়ার নিয়েই ব্যস্ত। খোলামেলা পোশাকের একটি ছবি সোশ্যাল সাইটে কি প্রতিক্রিয়া আনলো, তা নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা নেই তার। কারণ, মানুষের “শালীনতাবোধ”এ আঘাত হানতে তিনি দ্বিধাবোধ করেন না!
Leave a Reply