আমি একটি মেয়ে, এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছি। আমি যার ব্যাপারে কথা বলবো ওই ছেলেটি বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। আমার বাসার সামনের বাসায় থাকে। এক বছর যাবত আমরা আমাদের বর্তমান এলাকায় থাকি। ও আমাকে দেখে পছন্দ করে ফেলে। আমি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণত বাইরে যাই না, কিন্তু একদিন বের হয়েছিলাম আর সেই সুযোগেই ও আমাকে প্রপোজ করে আর কথা বলতে চায়। কিন্তু আমি ওর সঙ্গে কথা বলি নি। ও তখন আমাকে ওর ফোন নম্বর দিতে চায়। প্রথমে আমি না নিলেও পরে একটি বিশেষ কারণে আমাকে নিতে হয়। তাছাড়াও আমি লক্ষ্য করেছি- ও আমার জন্য, আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য সবকিছু করে।
তারপর আমি ওর সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু তখনও আমি ওকে পাত্তা দিতাম না। তবুও ও কথা বলতে চাইতো। বলে রাখা ভালো যে ও এই এলাকায় অনেকদিন যাবত আছে এবং এলাকায় মারামারি করার মতো একটি ছেলে। যদিও সে খুব ভালো পরিবারের সন্তান। পরিবারের আদরে সে বেশি বেপরোয়া হয়ে গিয়েছে। সিগারেট, এমন কী মাঝে মধ্যে মাদকও সেবন করতো। ওর বাবা-মা এসব জানে না। আমি ওর এসব পছন্দ করতাম না। আমি ওকে পরিবর্তন হতে বলেছিলাম। ও আমার কথায় মাদক নেয়া ছেড়ে দিয়েছে, সিগারেটও ছেড়ে দিয়েছে। আমার বাবার সঙ্গে ওর দেখা হয়।
এই এলাকায় আমার অনেক আত্মীয় থাকে, ও সবাইকে চেনে। আমার পরিবারে অনেক বাঁধা আছে। আমি পরিবারের ছোটমেয়ে তাই সবাই আমাকে এখনও অনেক ছোট মনে করে। এখনও আমাকে মোবাইল দেয় নি। আমি আব্বুর বা আম্মুর মোবাইল দিয়ে মাঝে মধ্যে ওরসঙ্গে কথা বলতাম। আমি ওকে আমার বন্ধু হিসেবে ভাবলেও, ও আমাকে তা ভাবতো না। ও খুব চেষ্টা করে যে ওর সঙ্গে আমার প্রেম হোক। কিন্তু আমার জেদের কারণে ও বারবার হেরে গিয়েছে। আমি এই মুহূর্তে কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে চাই না। তাছাড়া আমি প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি না। ওর সঙ্গে মাঝখানে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কিন্তু ও সবসময় আমাকে বলতো যে ভবিষ্যতে ও আমাকে বিয়ে করবে। আমি ওর এসব কথা পছন্দ করতাম না। আমার পরিক্ষার পর ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। কারণ ও আমাকে কল দিতে বলেছিল কিন্তু আমি কল দিই নি- এই কারণে।
আমি খুব রাগী, ও নিজেও খুব রাগী। আমি ওকে রাগের মাথায় খারাপ ছেলে বলেছি; বলেছি- ও যা বলে সবই মেকি, এসব ভালোবাসা নয়, সবই আবেগ, ও একটি স্বার্থপর ছেলে। এসব বলার পর ও খুব রেগে যায়। এমনিতেও ওর ভালোবাসাকে আবেগ বললে ও রেগে যায়। ও এখন বলছে আমি নাকি এসব ঠিক করি নি। ও আরও অনেক কিছুই বলেছে। এরপর আমি ওরসঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিই। তাই ও এখন আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়, রীতিমত ব্ল্যাকমেইল করে। আমার আম্মুর মোবাইলে নাকি ও কল দেবে- এসব বলে। আমার এসব সহ্য হচ্ছে না। আরও বলে আমি নাকি ওর সঙ্গে ঠিক কাজ করি নি তাই ও নিজেও আমার সঙ্গে ঠিক কাজ করবে না। আমি ওকে বিয়ে করতে না চাইলে ও নাকি আমাকে জোর করে বিয়ে করবে, নয়তো ধর্ষণ করবে। আমার সমস্যা হচ্ছে আমি ওর হাত থেকে নিস্তার পাবো কী করে? কীভাবে ওকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরানো যাবে? আমি ওর এসব কথা সহ্য করতে পারছি না।
সমাধানঃ সত্যি বলতে কি আপু, তুমি যদি মনে করো তুমি নির্দোষ আর ছেলেটিরই সমস্ত দোষ, তাহলে তুমি বিশাল ভুল করছো। যথেষ্ট বড় হয়েছ তুমি, চিঠি যেভাবে গুছিয়ে লিখেছ তাতে তোমাকে বোকাও আমার মনে হচ্ছে না। তাহলে তুমি কেন জেনেশুনে এমন একটি ছেলের সাথে মেলামেশা করলে যে কিনা এলাকায় খারাপ ছেলে হিসাবে পরিচিত? ছেলেটি তো শুরুতেই তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে, সে কিন্তু কোন কনফিউশন রাখেনি। তাহলে তোমার কি দরকার ছিল আম্মুর ফোন ব্যবহার করে ছেলেটির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো? তুমি যোগাযোগ করতে না চাইলে তো ছেলেটির পক্ষে তোমার সাথে যোগাযোগ সম্ভব ছিল না, তাই না? তুমি নিজে আগ বাড়িয়ে যোগাযোগ করে, সম্পর্ক করে সেটা ভেঙে ফেলতে চাইছো… এতে যে কারোই মনে হবে যে তুমি তাঁকে ইউজ করে ছেড়ে দিচ্ছ। কেমন এই ছেলে নয়, অনেকেই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠতে পারে,। তাই আমার পরামর্শ থাকবে অচেনা মানুষের সাথে অন্তরঙ্গতা তৈরি করার আগে এই ঘটনার কথা অবশ্যই ভেবে নেবে।
ছেলেটির বয়স কেমন সেটা বুঝতে পারলাম না। তবে মনে হচ্ছে না খুব বেশি। এই বয়সে আজকাল আমাদের দেশের টিন এজাররা খুবই ভায়োলেণট আচরণ করে। তাই তোমার উচিত হবে ব্যাপারটা বাসায় জানানো। হ্যাঁ, তুমি যে আম্মুর ফোন ইউজ করে কথা বলেছ সেটাও জানাতে হবে। যত মিথ্যা বলবে, তোমার বিপদ তত বাড়বে। নিজেকে নিরাপদ রাখতে চাইলে অবশ্যই পরিবারকে সব খুলে বলো। তাহলে পরিবারই তোমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে আর ছেলেটি যাই বলুক না কেন পরিবার তোমাকে ভুল বুঝবে না। ভুলেও মা বাবার চোখের আড়ালে গোপনে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবে না। এতে কেবল তোমার নিজের বিপদই বাড়বে।
Leave a Reply